no:1 |
no:2 |
(1) দুনিয়া vs আখেরাত
(2) আমার আর বাঁচতে ইচ্ছা করেনা (3) দুঃখ ও দুশ্চিন্তা, দারিদ্র ও ঋণগ্রস্থ হওয়া থেকে মুক্তির জন্য দুয়া __________________________________________ দুনিয়া vs আখেরাত মানুষের স্বভাব হচ্ছে যেই জিনিসটা নগদ বা দ্রুত পাওয়া যায়, সেটা নিয়েই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তা অল্প হোক কিংবা বেশি। কিন্তু পরবর্তীতে অনেক বড় কিছু অপেক্ষা করলেও মানুষ সেটাকে মূল্যায়ন করে না। আমি কয়েকটা উদাহরণ দিচ্ছি, যাতে করে বিষয়টা বুঝতে আপনাদের জন্য সহজ হয়। . (১) অনেকে মনে করে, ইংল্যান্ড-আমেরিকার মতো ইয়াহুদী-খ্রীস্টান কিংবা মুশুরিকদের দেশে বসবাস করতে পারলে নিজের ও ছেলে-মেয়েদের জীবন সুন্দর ও নিরাপদ হবে। এটা দুর্বল ঈমানদার মুসলমানদের মাঝে মারাত্মক একটা ভুল ধারণা। যাই হোক, একটু ভালো থাকার আশায় কাফের দেশে যাওয়ার জন্যে হাজার-হাজার মুসলমানেরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ইংরেজী ভাষা শিখছে, লক্ষ-লক্ষ টাকা খরচ করছে, মানুষের কাছে বুদ্ধি নেওয়ার জন্য ছুটাছুটি করছে. . .কিন্তু কুরআন পড়া ও বুঝার জন্যে তারা আরবী ভাষা শিখছেনা। যেই সালাত না পড়লে সাক্বার নামক জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে, যেই সালাত সম্পর্কে কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম প্রশ্ন করা হবে, তাদের অধিকাংশ মানুষই সেই সালাত বুঝে-শুনে তার হক্ক আদায় করে পড়ছেনা। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে, অনেকে সালাত পড়ার সঠিক নিয়ম-কানুনও জানেনা, জানার চেষ্টাও করেনা, এই বিষয়টিকে তারা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনেও করেনা। . (২) জামাতের প্রথম কাতারে সালাত আদায় করার এতো বড় ফযীলত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “লোকেরা যদি জানতো যে জামাতের প্রথম কাতারে সালাত আদায় করার কি সওয়াব রয়েছে, তাহলে লোকেরা (প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর জন্য এতো বেশি প্রতিযোগিতা করতো যে), লটারী দেওয়া ছাড়া প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর সুযোগ কেউ কখনো পেতোনা।” এতো বড় পুরষ্কার থাকা সত্ত্বেও লোকেরা জামাতের প্রথম কাতারে সালাত আদায় করার জন্য কোন প্রতিযোগিতা বা চেষ্টা করেনা। কিন্তু হলিউড-বলিউডের চরিত্রহীন, লম্পট, মাতাল, উলংগ নায়িকা-গায়িকাদেরকে নাচ-গান দেখার জন্যে, হারাম ও জুয়ার সমতুল্য ক্রিকেট-ফুটবল খেলা দেখার জন্য প্রতিযোগীতা করছে, এইগুলোর টিকেট কেনার জন্যে সারাদিন লম্বা লাইন ধরে হাজার টাকা খরচ করছে, এমনকি মারামারিও করছে। . (৩) বর্তমান যুগের মুসলমানদের অবস্থা হয়েছে এমন যে, দুনিয়াবি বিষয়ে কারো কখনো বুদ্ধির প্রয়োজন হলে মানুষ হাজার হাজার টাকা খরচ করে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির শরণাপন্ন হয়। কিন্তু দ্বীনের ব্যপারে প্রশ্নের উত্তর জানার প্রয়োজন হলে মানুষ আলেম আর জাহেল দেখেনা। সামনে যাকে পায় তাকেই প্রশ্ন করছে, ফুটপাত থেকে ফতোয়া নিচ্ছে। আজকাল টিভি, ইউটিউব ফেইসবুক ও ইন্টারনেটের যুগে মূর্খ লোকেরা নিজের মনগড়া দ্বীন প্রচার করেছে। মানুষ আলেমদের কাছে না গিয়ে সহজেই মোবাইল বা কম্পিউটারে হাতের কাছেই পাওয়া যায়, সেইজন্যে জাহেলদের কাছ থেকেই দ্বীন শিখে নিজেকে হেদায়েতপ্রাপ্ত বলে মনে করছে। . এই উদাহরণগুলো থেকে সহজেই বুঝা যায়, মানুষ দুনিয়াকে কতটুকু মূল্যায়ন করছে, আর আখেরাতকে কতটুকু মূল্যায়ন করছে। মানুষের এই চিরন্তন স্বভাবের সমালোচনা করে আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “বরং তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে থাক। অথচ, পরকালের জীবনই হচ্ছে উত্তম এবং চিরস্থায়ী।” সুর আল-আ’লাঃ ১৬-১৭। আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেছেন, “নিশ্চয় তারা দ্রুত চলে আসে এমন জীবনকে (অর্থাৎ দুনিয়াকে) ভালবাসে। আর তারা পরবর্তীতে আসে এমন কঠিন দিনকে (অর্থাৎ পরকালকে) উপেক্ষা করে চলে।” সুরা আল-ইনসানঃ ২৭। আয়াতের তাফসীরঃ মৃত্যুর পরের জীবন আখেরাতকে বিশ্বাস করেনা, বা আখেরাতের ব্যপারে সন্দেহ পোষণ করে এমন কাফের-মুশরেক এবং তাদের মতোই অন্যান্য অমুসলিম লোকেরা সর্বদা দুনিয়াবী আশা-আকাংখার মায়াজালে বন্দী থাকে। তাদের সমস্ত চেষ্টা ও মনোযোগ দুনিয়ার জন্যেই ব্যয় করে। কিয়ামত ও তার কঠিনতা, ভয়াবহতাকে তারা উপেক্ষা করে চলে। অর্থাৎ কেয়ামতের জন্য তারা কোন প্রস্তুতি গ্রহণ করে না, এবং তার কোন পরোয়াও করে না। . দুনিয়ার জীবনে ভোগ-বিলাসের প্রতি অনাসক্ত হয়ে আখেরাতকে প্রাধান্য দেওয়ার মর্যাদা নিয়ে অন্তর ছুঁয়ে যায় এমন একটা হাদীসঃ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি দুনিয়াকে তার সবচাইতে গুরুত্বপুর্ণ বিষয় বানাবে, আল্লাহ তার কাজকর্ম এলোমেলো করে দেবেন, তার দুই চোখের মাঝে সর্বদা দারিদ্রতাকে দৃশ্যমান করে রাখবেন। আর সে দুনিয়া শুধুমাত্র ততটুকুই লাভ করতে পারবে, যতটুকু তার তাকদীরে লিপিবদ্ধ ছিলো। আর যার কাছে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে পরকাল, আল্লাহ তার সব কাজ সুন্দরভাবে সমাধান করে দিবেন, তার অন্তরকে তৃপ্ত করে দেবেন। আর দুনিয়া নিজেই তার কাছে ধরা দেবে, যদিও সে তা কামনা করেনা।” ইবনু মাজাহঃ ৪১০৫। হাদীসের সনদ সহীহ, শায়খ আলবানী (রহঃ), সিলসিলাহ সহীহাহঃ ৯৫০। __________________________________________ আমার আর বাঁচতে ইচ্ছা করেনা মানুষের যতগুলো বেদনা আছে, সম্ভবত সবচাইতে হতাশাজনক ও খারাপ একটা হচ্ছে “আমার আর বাঁচতে ইচ্ছা করেনা”। দুঃখ-কষ্টে পড়লে শয়তান মানুষকে জীবন সম্পর্কে বিরূপ করে তুলে, আমার জীবনের কোন মূল্য নেই, আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে, এমন চিন্তা-ভাবনা অন্তরে ঢুকিয়ে দেয়। এমন অবস্থায় মানুষের অন্তরে আল্লাহ এবং তাক্বদীর বা ভাগ্যের লেখা সম্পর্কে বাজে ধারণা সৃষ্টি হয়, অনেকে নিজের জীবনের ব্যপারে হতাশ হয়ে পড়ে। তখন অনেকে প্রশ্ন করেঃ . (১) আল্লাহ মানুষ কেনো বানাইলেন? (২) আমি আর বাঁচতে চাইনা। (৩) বেঁচে থেকে কি লাভ? (৪) আমি মরে গেলেই ভালো হয়। . আমাদের যদি পরকালের প্রতি বিশ্বাস থাকে তাহলে মনে রাখা প্রয়োজন, দুনিয়ার জীবন পরীক্ষা ছাড়া আর কিছুইনা। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্যে। আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে, আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার মাধ্যমেই মানুষ প্রকৃত সুখী হতে পারে। আর দুনিয়ার জীবনের জন্যে যেই জিনিসগুলো প্রয়োজন সেইগুলো পাওয়ার জন্যে চেষ্টা করতে হবে, আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে দুয়া ও সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে. . .এবং সুখে ও দুঃখে সর্বাবস্থাতে ধৈর্য ধরতে হবে। যেই সমস্ত ভাই ও বোনেরা নিজের জীবন নিয়ে ফিতনাহ (পরীক্ষা) বা শয়তানের ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রনায়) পড়েছেন, আমি তাদেরকে বলবো আপনারা ঈমান কি তা শিক্ষা করুন, কুরআন সম্পর্কে জানুন। . যে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে চায়, আল্লাহ তাকে সঠিক পথ দেখান। যে আল্লাহ সম্পর্কে ভুল বা বাজে ধারণা রাখে, সে দুনিয়াতে অত্যন্ত কষ্টের জীবন বহন করে। আমি দুয়া করি, আল্লাহ তাঁর সমস্ত মুসলিম বান্দা ও বান্দীদেরকে মাফ করুন, বিশেষ করে যারা দুঃখ-কষ্টের মাঝে আছে তাদের প্রতি রহম করুন, তাদেরকে সুন্দর ফয়সালা দান করুন, আমিন। __________________________________________ দুঃখ ও দুশ্চিন্তা, দারিদ্র ও ঋণগ্রস্থ হওয়া থেকে মুক্তির জন্য দুয়া যারা স্বচ্ছল অবস্থায় শান্তিতে আছেন, তারা যেনো কঠিন পেরেশানি, বড় বিপদ, বড় ঋণের বোঝা, মানুষের, অলসতা, অক্ষমতা, কাপুরুষতার স্বীকার না হন, সেই জন্য নিয়মিত এই দুয়া পড়া উচিৎ। আর যারা দুঃখ-কষ্ট দ্বারা পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন, তারা নিয়মিত এই দুয়া পড়ে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবেন। اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ’ঊযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হা’যান, ওয়াল আ’জযি ওয়াল কাসাল, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দ্বোলাই’দ-দ্বাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল। অর্থঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুঃশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অলসতা ও অক্ষমতা থেকে, কৃপণতা ও কাপুরুষতা থেকে, ঋণের বোঝা ও মানুষের নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে। সহীহ বুখারীঃ ২৮৯৩। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এই দুয়াটি বেশি বেশি করে পড়তেন। ফাতহুল বুখারীঃ ১১/১৭৩। |
১. দাজ্জাল কে?
২. দাজ্জালকে আমরা চিনবো কিভাবে? ৩. দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার উপায় কি? __________________________ কেয়ামতের পূর্বে দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে আল্লাহ দাজ্জালকে দিয়ে পরীক্ষা করবেন। দাজ্জাল একজন মানুষ, যে ঈসা (আঃ) এর মতো অলৌকিক কাজ করে দেখাবে। এই জন্য তাকে বলা হয় “মাসীহিদ-দাজ্জাল” অর্থাৎ প্রতারক বা মিথ্যা মাসীহ। দাজ্জালের পরিচয়ঃ দাজ্জাল একজন তরুন মানুষ হবে, যার গায়ের রঙ হবে লালচে। তার চুল হবে ঘন ও কোঁকড়ানো। তার কপাল হবে চওড়া ও বুক হবে প্রশস্ত। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তার ডান চোখ হবে কানা আর বাম চোখ হবে আংগুরের মতো ফোলা, দেখে মনে হবে চোখ যেনো চোখের কোঠর থেকে বের হয়ে আসছে। দুই চোখের ঠিক মাঝখানে লেখা “কাফ”, “ফা”, “রা” (كافر, অর্থাৎ কাফির), এই তিনটি অক্ষর লেখা থাকবে যার অর্থ হলো কাফির আর এই লেখা শিক্ষিত-অশিক্ষিত সকল ইমানদার পড়তে পারবে। দাজ্জালের আরেকট বৈশিষ্ট্য হবে তার কোনো ছেলে মেয়ে থাকবেনা বা সে হবে নিঃসন্তান। দাজ্জাল প্রথমে নিজেকে “মাসীহ” বা ঈসা (আঃ) এর মতো অলৌকিক ক্ষমতার দাবী করবে, আর পরে সে নিজেক সরাসরি “আল্লাহ” হিসেবে দাবী করবে। কারণ, সে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী (যাতে মানুষকে পরীক্ষা করা যায়) অনেক অলৌকিক কাজ করে দেখাবে। সে আকাশের মেঘকে হুকুম করবে আর আল্লাহর ইচ্ছায় বৃষ্টি হবে, আর যে এলাকার মানুষ তাকে আল্লাহ হিসেবে মানবেনা সেখানে বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে দুর্ভিক্ষ হবে। দাজ্জালের অন্য অলৌকিক কাজের মধ্যে থাকবে তার সাথে রুটির পাহাড় ও পানির নহর থাকবে যা সে মানুষের মাঝে বিতরণ করবে। সে মৃত মানুষকে জীবিত করে দেখাবে, সে একজনকে বলবে আমি আল্লাহ আমাকে মানো। এর প্রমান হিসেবে সে একটা জিনকে তার বাবা মার সুরতে হাজির করবে আর ঐ জিন তার বাবা মা সেজে বলবে, দাজ্জালই হচ্ছে আল্লাহ, তাকে আল্লাহ বলে মেনে নিতে বলবে। দাজ্জাল কখন আসবে? এক হাদীসে বলা হয়েছে, মানুষ যখন দাজ্জাল নিয়ে আলোচনা করবেনা তখন দাজ্জাল আসবে। অর্থাৎ মানুষ যখন দাজ্জাল নিয়ে কথা বলবেনা, খতিব সাহবেরা মসজিদে খুতবা দেবেনা, আলেমরা তাকে নিয়ে ওয়াজ করবেনা বা বই লিখবেনা। আর মানুষ তখন জানবেনা যে দাজ্জাল নামক একজন মানুষ একটা বড় ফেতনা সৃষ্টি করবে। আর তাই অজ্ঞ মানুষেরা খুব সহজেই দাজ্জালের ফেতনায় ঈমান হারিয়ে চির জাহান্নামী হবে (নাউযুবিল্লাহ)। __________________________ দাজ্জাল সম্পর্কে বিভ্রান্তিঃ হিযবুত তাওহীদ, বায়েজীদ খান পন্নী, মাওলানা মওদুদী (রহঃ), ইমরান নযর হোসাইন সহ বিভিন্ন দল এবং লোকেরা দাজ্জালের ব্যপারে মারত্মক অপব্যখ্যার শিকার হয়েছেন। হিযবুত তাওহীদ, বায়েজীদ খান এদের মতো বিভ্রান্ত লোকেরা দাজ্জালের অর্থ করেছে ইয়াহুদী খ্রীস্টান এবং তাদের মিডিয়াগুলোকে। এরা নির্বোধ লোক, যারা হাদীস সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখেনা। মাওলানা মওদুদী (রহঃ) ও অজ্ঞতাবশত দাজ্জালকে নিছক কল্প-কাহিনী বলে ফতোয়া দিয়েছিলেন (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক), এবং এ সম্পর্কিত অসংখ্য সহীহ হাদীস সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেছিলেন, আল্লাহ তাকে মাফ করুন। অনুরূপভাবে দাজ্জালের ব্যপারে ইমরান নজর হোসাইন ও ভুল অর্থ করেছেন। আপনারা হক্ক ও বাতিল যাচাই করতে চাইলে শুধুমাত্র সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে দাজ্জাল সম্পর্কিত সহীহ হাদীসগুলো পড়ুন, ইন শা আল্লাহ এতোটুকুই যথেষ্ঠ হবে। |
no:3.প্রশ্ন : ইসলামের দৃষ্টিতে ' 7 up, কোকা কলা, RC ইত্যাদি খাওয়া কতটা বৈধ? দয়া করে জানাবেন।==========================
উত্তর : সেভেন আপ, আর সি কোলা, কোকা কোলা, মেরিন্ডা, ফান্টা, পেপসি ইত্যাদি কোমল পানীয়ের ব্যাপারে আমার জানামতে নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন কোন তথ্য পাওয়া যায় নি যে, এগুলোতে এ্যালকোহল বা হারাম কিছু মিশানো থাকে। এ ব্যাপারে কিছু রটনা নেটে পাওয়া যায় যেগুলো নির্ভরযোগ্য নয়। তবে যদি প্রমাণিত হয় যে, এগুলো হারাম দ্রব্য মিশানো হয় তাহলে তা অবশ্যই নাজায়েয হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। আল্লাহ ভালো জানেন। ⭕ প্রশ্ন : আমি শুনেছি যে স্বামী-স্ত্রী যদি রাগ করে ৯০ দিন আলাদা থাকে তাহলে নাকি তালাক হয়ে যায়। এই ব্যপারে সহি হাদিস কি। প্লিজ জানাবেন শাইখ। ============================= উত্তর : ‘স্বামী-স্ত্রী যদি রাগ করে ৯০ দিন আলাদা থাকলে তালাক হয়ে যায়।’ এ কথা ভিত্তিহীন। ইসলামের দৃষ্টিতে তালাক ছাড়া তালাক প্রদান ছাড়া তালাক হয় না। আল্লাহু আলাম। ⭕ প্রশ্ন : কেও যদি চুল স্ট্রেট করে তাহলে কি গুনাহ হবে? এটা কি এটা আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করা হবে? একটু জানাবেন প্লিয। ============================== উত্তর : ইসলামে নারীদের রূপচর্চা সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে। এ মর্মে পর্যাপ্ত হাদীস বিদ্যমান। সুতরাং বাঁকা চুল সোজা করা বা সোজা চুল বাঁকা করা প্রসঙ্গে হাদীসে কোন ব্ক্তব্য আসে নি। সুতরাং (আমার জানা মতে) ইনশাআল্লাহ এতে কোন সমস্যা নাই। আল্লাহু আলাম। ⭕ প্রশ্ন : আমি শুনেছি যে, ছেলে বা মেয়ে যেই হোক - টয়লেটে গেলে মাথায় কাপর দিয়ে বসতে হয়, নয়তো শয়তান মন্ত্রনা দেয়, এ কথাটা কি ঠিক? =============================== উত্তর : “টয়লেটে গেলে মাথায় কাপড় দিয়ে বসতে হয়, নয়তো শয়তান মন্ত্রনা দেয়”এটি ভিত্তিহীন কথা। মাথায় কাপড় দিলে শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে বাঁচার কোন সম্ভাবনা নেই। বরং টয়লেটে প্রবেশের পূর্বে দুআ পড়তে হবে আর অন্যান্য সময় আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে রক্ষা করবেন ইনশাআল্লাহ। ⭕ প্রশ্ন : আমরা জানি যে পাকা চুলে কালো রং ব্যবহার করা নিষেধ।কিন্তু শাইখ,চুলের ড্যামেজ এর কারনে যদি চুল লালচে হয়ে যায়,তাহলে কি সেই চুলে কালো রং বা তেল জাতীয় কিছু যা ব্যবহার করলে চুল কালো হয় সেগুলো কি ব্যবহার করা যাবে? ================================ উত্তর : চুল ড্যামেজ হওয়ার কারণে লালচে ভাব হয়ে গেলেও কালো মিশমিশে কালো কলপ ব্যবহার করা বৈধ নয়। যেহেতু হাদীসে সাধারণভাবে কালো কলপ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে। তবে এমন লাল ও কালো মিশ্রণে খয়রী বা ধুসর রঙ্গের কলপ ব্যবহার করা জায়েয। আর চুল কালো করার উদ্দেশ্যে ওষুধ বা বিশেষ তেল ব্যবহার করতে দোষ নেই ইনশাআল্লাহ। আল্লাহু আলাম। ⭕ প্রশ্ন : আমি যেখানে থাকি সেখানে রমজান মাসে এশার নামাজ রাত ১১ টার পরে হয় এবং ফজর এর সময় হয় ভোর ৪ টার দিকে. আমি যদি কোন কারনে এশা র নামাজ না পরে ঘুমিয়ে যাই এবং রাত ২/৩ টার দিকে উঠে পড়ি , আমার নামাজ কি হবে নাকি ওই নামাজ টা কাযা হবে ? ================================= উত্তর : সূর্য ডুবার পর থেকে ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত সময় হিসেব করে অর্ধ রাত্রির পূর্ব পর্যন্ত ইশার সময়। তাই অর্ধ রাত্রির আগে অবশ্যই তা আদায় করতে হবে। ইচ্ছাকৃত ভাবে এই সময় অতিক্রম করা বৈধ নয়। তবে কোন সময় হঠাৎ ঘুমের কারণে অর্ধরাত্রি অতিক্রম হয়ে গেলে যখনই ঘুম থেকে জাগ্রত হবেন তখনই কাল বিলম্ব না করে তা আদায় করে নিবেন। তাহলে ইনশাআল্লাহ গুনাহ হবে না। আল্লাহ তাওফিক দানকারী। |
no:4বে-নামাযীর তওবা
প্রশ্ন: আমি আমার জিন্দেগির একটা দীর্ঘসময় নামায আদায় করিনি। আমি আল্লাহ্র কাছে তওবা করে গত দুই বছর ধরে নিয়মিত নামায আদায় করছি। জীবনের যে দীর্ঘসময় নামায আদায় করিনি সেটার কী হুকুম হবে? ============== উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ। আপনি আপনার উপর আল্লাহ্র নেয়ামতের কথা স্মরণ করুন যে, আপনি বে-নামাযী ছিলেন; কিন্তু আল্লাহ্ আপনাকে ইসলামের দিকে ফিরিয়ে এনেছেন। সুতরাং ওয়াক্তমত নিয়মিত নামাযগুলো আদায় করুন। বেশি বেশি নফল নামায আদায় করুন; যাতে করে এ নফল নামাযগুলো আপনার ছুটে যাওয়া ফরয নামাযের প্রতিকার হতে পারে। যেমনটি এসেছে হুরাইছ বিন ক্বাবিসা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেন, আমি মদিনায় আসার পর দোয়া করলাম: হে আল্লাহ্, আমার জন্য একজন সৎ সঙ্গি পাওয়া সহজ করে দিন। এরপর আমি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর মজলিসে বসে বললাম, আমি আল্লাহ্র কাছে দোয়া করেছি, আল্লাহ্ যেন আমাকে একজন সৎ সঙ্গি দান করেন। আপনি আমাকে এমন একটি বাণী শুনান যে বাণীটি আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছেন; আশা করি সে বাণীর মাধ্যমে আল্লাহ্ আমাকে উপকৃত করবেন। তখন তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: কিয়ামতের দিন বান্দার কাছ থেকে সর্বপ্রথম যে আমলের হিসাব নেয়া হবে সেটা হচ্ছে- নামায। যদি নামায ঠিক থাকে তাহলে সে উত্তীর্ণ ও সফলকাম হবে। আর যদি নামায ঠিক না থাকে তাহলে সে ব্যর্থ ও বিফল হবে। যদি তার ফরয নামাযে কিছু ঘাটতি থাকে তখন রব্ব বলবেন: দেখ; আমার বান্দার কোন নফল আমল আছে কি? থাকলে সেটা দিয়ে ফরযের ঘাটতি পূরণ করা হবে। এভাবে তার বাকী আমলগুলোরও হিসাব নেয়া হবে।”[সুনানে তিরমিযি (৪১৩), সহিহুল জামে (২০২০)] সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে হাদিসটি আনাস বিন হাকীম আল-যাব্বি থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি মদিনায় আসার পর আবু হুরায়রা (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাত হল। তিনি আমার বংশ-পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। আমি আমার বংশ-পরিচয় উল্লেখ করলাম। এরপর তিনি বললেন: ওহে যুবক, আমি কি তোমাকে একটি হাদিস বর্ণনা করব না? আমি বললাম: অবশ্যই; আল্লাহ্ আপনার প্রতি রহম করুন। (বর্ণনাকারী ইউনুছ বলেন: আমার ধারণা হচ্ছে- তিনি কথাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেই বর্ণনা করেছেন।) তিনি বলেন: কিয়ামতের দিন মানুষের কাছ থেকে সর্বপ্রথম যে আমলের হিসাব নেয়া হবে সেটা হচ্ছে- নামায। তিনি বলেন, আমাদের রব্ব ফেরেশতাদেরকে বলবেন -অথচ তিনি সম্যক অবগত-: তোমরা আমার বান্দার নামায দেখ; আমার বান্দা কি নামায পরিপূর্ণভাবে আদায় করেছে; নাকি নামাযে ঘাটতি আছে? যদি নামায পরিপূর্ণ পাওয়া যায় তাহলে নামায পরিপূর্ণ হিসেবে লেখা হবে। আর যদি নামাযে ঘাটতি পাওয়া যায় তখন রব্ব বলবেন: দেখ, আমার বান্দার নফল নামায আছে কিনা? যদি নফল নামায থাকে তখন বলবেন: নফল দিয়ে আমার বান্দার ফরযের ঘাটতি পূরণ কর। এভাবে অন্য আমলগুলোর হিসাব নেয়া হবে।”[সহিহুল জামে (২৫৭১)] -শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ |